অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : কুমিল্লায় নকল করতে না দেওয়ায় বরুড়া ও চান্দিনা উপজেলার দুই কেন্দ্রে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ এবং শিক্ষকের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষক, পরীক্ষার্থী এবং পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (৯ মে) গণিত পরীক্ষার দিনে জেলার বরুড়া উপজেলার হাজী নোয়াব আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে নকল করতে বাধা দেওয়ায় এবং কড়াকড়ি পাহারা দেওয়ায় পরীক্ষা শেষে বিদ্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, জানালা ভাঙচুরসহ শিক্ষকদের উপর হামলা করেছে কয়েকজন উশৃঙ্খল শিক্ষার্থীসহ বহিরাগতরা। পরীক্ষা শেষে বেশ কয়েকজন উশৃঙ্খল শিক্ষার্থী ও বহিরাগত মিলে উত্তরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ৬ জন আহত হন। একই উপজেলার মহেশপুর আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে খাতা নিয়ে আসার পথে কে বা কারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে নুরুল ইসলাম নামে একজন পুলিশ কনস্টেবল আহত হন। মঙ্গলবার (৯ মে) এ ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ ১৩ জনকে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।
বরুড়া হাজী নোয়াব আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র সচিব মো. মেদাদ উদ্দিন বলেন, বাইরে থেকে কোনো নকল সরবরাহ করতে না পারার কারণে কিছু সংখ্যক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা শেষে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পরিস্থিতি অশান্ত করেছে। পুলিশ এতে বাধা দিলে বহিরাগত কিছু লোকজন এসে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পরীক্ষার হলের বাইরে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। স্কুলের দক্ষিণ পাশের বিল্ডিংয়ের কয়েকটি গ্লাস ভাঙচুর করে। আনুমানিক ৩টার দিকে খাতা নিয়ে যাওয়ার পথে পুলিশের গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন।
বরুড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, পরীক্ষার শেষে খাতা নিয়ে বের হওয়ার সময় শিক্ষকদের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে পরীক্ষার্থীরা। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরীক্ষার খাতা নিরাপদে বোর্ডে প্রেরণ করা হয়েছে।
বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবরিনা আফরিন মুস্তফা বলেন, বরুড়া উপজেলায় সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এসব ঘটনার পর বরুড়া হাজী নোয়াব আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কেন্দ্র সরিয়ে শাহেরবানু আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে কেন্দ্র করা হয়। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে চান্দিনা উপজেলার এতবারপুরে পরীক্ষার্থীসহ বহিরাগতরা মিলে শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আবু সাঈদ (৪৬) নামের এক শিক্ষক আহত হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন স্থানীয়রা। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মঙ্গলবার (৯ মে) দুপুরে উপজেলার এতবারপুর আজম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত শিক্ষক আবু সাঈদ চান্দিনা উপজেলার বড় গোবিন্দপুর আলী মিয়া ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস শীল বলেন, এ ঘটনা শোনার পর আমি হাসপাতাল এবং ঘটনাস্থল দুটোই পরিদর্শন করেছি। আহত শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি। তার নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শহিদুল ইসলাম জানান, যেসব কেন্দ্র থেকেই অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যাচ্ছে, সেসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত পর্যবেক্ষক ও নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে জোরালো ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দিয়ে অনুরোধ করা হচ্ছে। কুমিল্লায় সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply